এক দুর্ভেদ্য রহস্যের নাম বারমুডা
ট্রায়াঙ্গল। এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল
নিয়ে রয়েছে নানা কথা। তবে সেই
রহস্যের কূলকিনারা করতে পারেনি
কেউ। তবে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্যের সমাধান
করার বিষয়টি উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নরওয়ের
গবেষকেরা উত্তর মেরুর ব্যারেন্টস
সাগরের তলদেশে বেশ কিছু বড়
গর্তের সন্ধান পেয়েছেন। আর্কটিক
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা
বলছেন, এই গর্ত বা আগ্নেয়গিরির
মুখগুলোর ব্যাস ৩ হাজার ২৮০ ফুট ও
গভীরতা ১৩১ ফুট হতে পারে। থ্রিডি
সিসমিক ইমেজিং পদ্ধতিতে এই
গর্তগুলো শনাক্ত করেছেন তাঁরা।
গবেষকেরা বলছেন, তেলের খনি
থেকে সৃষ্ট উচ্চ চাপের মিথেন
গ্যাসের উদগীরণে এ গর্ত সৃষ্টি হতে
পারে।
ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে
জানানো হয়, এই আবিষ্কারের ঘটনা
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নামের
বিতর্কিত ওই এলাকায় জাহাজ ও
বিমানের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনার
বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে পারে। এর
আগে ২০১৪ সালে সাইবেরিয়ান
টাইমসকে দেওয়া রাশিয়ার গবেষক
ভ্লাদিমির পোতাপভের এক
সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি দিয়েছে
ডেইলি মেইল। পোতাপভের তত্ত্ব
অনুযায়ী, মিথেন গ্যাসের উদগীরণ
সমুদ্রকে উত্তপ্ত করে। মিথেনযুক্ত
পানির কারণে জাহাজ ডুবে যায়। এ
ছাড়া বায়ুমণ্ডলেও বিশেষ
পরিবর্তনের ফলে বিমান দুর্ঘটনা
ঘটে।
ক্যারিবীয় সাগরের এক কল্পিত
ত্রিভুজ এলাকা হলো বারমুডা
ট্রায়াঙ্গল। ত্রিভুজের তিন বিন্দুতে
আছে ফ্লোরিডা, বারমুডা আর
প্যুয়ের্তো রিকো। অবশ্য এই বিন্দু
নির্ধারণ নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। সে
যা-ই হোক, এ অঞ্চলটিকে মারাত্মক
রহস্যময় এলাকায় পরিণত করেছে কিছু
খবর। বলা হয়, এ ত্রিভুজ অঞ্চলে
অদ্ভুতভাবে হারিয়ে গেছে মানুষ,
জাহাজ আর উড়োজাহাজ। রেখে
যায়নি কোনো ধ্বংসাবশেষ। এসব
‘উড়ো’ খবর নিয়ে গবেষণা হয়েছে,
ডকুমেন্টারি বানানো হয়েছে।
শেষমেশ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় সব
রহস্যের অসারতা প্রমাণ হয়েছে।
কিন্তু রহস্যপ্রিয় মানুষ এতে বিশেষ
খুশি হতে পারেননি। তাঁরা এখনো
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে রহস্যের গন্ধ
পান।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যময় চরিত্র
প্রথম নিয়ে আসেন ই ভি ডব্লিউ
জোনস। ১৯৫০ সালের বার্তা সংস্থা
এপি প্রকাশিত একটি নিবন্ধে জোনস
অভিযোগ করেন, এ এলাকায় বেশ
কিছু উড়োজাহাজ ও নৌযান
বেমালুম উধাও হয়ে গেছে, যেগুলোর
কোনো সন্ধান আজ পর্যন্ত মেলেনি।
দুই বছর পর ফেট ম্যাগাজিনের একটি
নিবন্ধে দাবি করা হয়, ১৯৪৫ সালে
ফ্লাইট-১৯ নামের মার্কিন
নৌবাহিনীর পাঁচটি বোমারু
বিমানের একটি বহর উধাও হয়ে
গেছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে। এই বহর
থেকে শেষ বার্তা ছিল, ‘সবকিছুই খুব
অদ্ভুত লাগছে। আমরা জানি না,
কোন দিক পশ্চিম। সাগরকেও
স্বাভাবিক দেখাচ্ছে না। আমাদের
মনে হচ্ছে আমরা…’।
এরপর একের পর এক খবর গত শতকের শেষ
পর্যন্ত তুমুল হইচই তুলেছে। যার মধ্যে
আস্ত ডিসি বিমান, যাত্রীবাহী
জাহাজ পর্যন্ত উধাও হয়ে যাওয়ার খবর
ছিল।
তবে এসব খবরের পাশাপাশি
ব্যাখ্যাও চলেছে। বিজ্ঞানীরা
নানা ধরনের প্রাকৃতিক ও
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
বলেছেন, এর সবই স্বাভাবিক ঘটনা।
রং চড়িয়ে বলা হচ্ছে। আবার বলা
হয়েছে, দুনিয়াজুড়ে দুর্ঘটনার যে
হার, এতে বারমুডায় মোটেও বেশি
দুর্ঘটনা ঘটছে না। কখনো কখনো
বারমুডা-সংক্রান্ত খবর তদন্ত করতে
গিয়ে দেখা গেছে, খবরটাই ভুয়া।
রং চড়িয়ে লেখা হয়েছে
ট্যাবলয়েডগুলোতে।
অনেকের মতে, ক্রিস্টোফার
কলম্বাসের কাছ থেকে সর্বপ্রথম
এলাকাটির বিষয়ে অদ্ভুত
অভিজ্ঞতার কথা জানা যায়।
কলম্বাস লিখেছিলেন, তাঁর
জাহাজের নাবিকেরা এ অঞ্চলের
দিগন্তে আলোর নাচানাচি এবং
আকাশে ধোঁয়া দেখেছেন। এ ছাড়া
তিনি কম্পাসের উল্টাপাল্টা দিক
নির্দেশের কথাও বর্ণনা করেছেন।
অনেকে আবার মনে করেন,
নাবিকেরা যে আলো দেখেছেন,
তা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নৌকায়
রান্নার কাজে ব্যবহৃত আগুন এবং
কম্পাসে সমস্যা হয়েছিল নক্ষত্রের
অবস্থান পরিবর্তনের কারণে। ১৯৫০
সালের ১৬ সেপ্টেম্বর
অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি)
সাংবাদিক ই ভি ডব্লিউ জোনস
সর্বপ্রথম এলাকাটি নিয়ে খবরের
কাগজে লেখেন। অনেকে মনে
করেন, ওই অন্তর্ধানের কারণ নিছক
দুর্ঘটনা, যার কারণ হতে পারে
প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা চালকের
অসাবধানতা। তা ছাড়া এই
ত্রিভুজের ওপর দিয়ে মেক্সিকো
উপসাগর থেকে উষ্ণ সমুদ্রস্রোত বয়ে
গেছে। এর তীব্র গতি অধিকাংশ
অন্তর্ধানের কারণ।
No comments:
Post a Comment